শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন

সূরা ফাতেহার যত ফজিলত

সূরা ফাতেহার যত ফজিলত

স্বদেশ ডেস্ক

আল কুরআন আল্লাহর মহিমান্বিত গ্রন্থ; যাতে বিধৃত হয়েছে মানুষের সফলতার পথ-কাহিনী। যার অনুসরণ ব্যক্তিকে পৌঁছাতে পারে কামিয়াবির শীর্ষ চূড়ায়। আর অনুকরণহীনতায় নিক্ষিপ্ত হতে পারে ব্যর্থতার আঁস্তাকুড়ে। সেই মহাগ্রন্থের মহান সূরার নাম সূরাতুল ফাতেহা, যা কুরআনের প্রারম্ভে লিখিত, যা দিয়ে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সূচনা হয়। এই সূরার যত ফজিলতের কথা কুরআন ও হাদিসে এসেছে, অন্য কোনো সূরার ব্যাপারে তেমনটি আসেনি।

সূরা ফাতেহা এমন এক মহান সূরা যার মধ্যে পুরো কুরআনের সারমর্ম বিধৃত হয়েছে। সাহাবি সাঈদ ইবনে মুয়াল্লা রা: বলেন, এক দিন নবীজী সা: আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই আমি কি তোমাকে এমন একটি সূরা শিখাব, যা কুরআনের সর্বাধিক মহান? অতঃপর নবীজী সা: আমার হাত ধরলেন। এরপর যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে মসজিদ থেকে প্রস্থানের আগে কুরআনের সর্বাধিক মহান সূরা শিখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। নবীজী বললেন, ‘হ্যাঁ। আর তা হলো- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। (বুখারি-৪৪৭৪)

আল কুরআনের সর্বোত্তম সূরা : সূরায়ে ফাতেহা কুরআনের সর্বোত্তম সূরা। সাহাবি আনাস রা: বলেন, নবীজী এক স্থানে বসা ছিলেন। হঠাৎ সেখান থেকে নিচে নামলেন। তাঁর দেখাদেখি সাহাবিরাও নামলেন। আমি তাঁর দিকে তাকালে তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বোত্তম সূরা স¤পর্কে জানিয়ে দেবো?’ তার পর তিনি বললেন, ‘সেটি হলো- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ (আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাতি-৭২৩)

তার তুল্য নেই কোনো সূরা : সাহাবি আবু জার রা: বলেন, আমি রাতের আঁধারে মদিনার কোনো এক গলিতে নবীজীর সাথে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি সূরা ফাতেহা দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছিলেন। তা শ্রবণে নবীজী সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং শেষ হওয়া পর্যন্ত গভীর মনোযোগ দিয়ে তা শুনলেন। শেষে তিনি বললেন, ‘পুরো কুরআনে এর সমতুল্য কোনো সূরা নেই।’ (মুজামুল আওসাত-২৮৬৬)

সূরায়ে ফাতেহা নিজেই নিজের তুল্য। তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল এমনকি কুরআনেও তার সমতুল্য কোনো সূরা নেই। সাহাবি উবাই ইবনে কাব রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল এমনকি কুরআনেও আল্লাহ তায়ালা সূরা ফাতেহার মতো কোনো সূরা অবতীর্ণ করেননি।’ (নাসায়ি-৯১৪)

আরশে আজিমের ধনভাণ্ডার : সাহাবি আনাস রা: থেকে বর্ণিত- নবীজী সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে এমন এক বস্তু দিয়েছেন, যার দ্বারা তিনি আমার ওপর গর্ববোধ করেন। তিনি বলেছেন, আমি তোমাকে ফাতেহাতুল কিতাব দিয়েছি; যা আমার আরশে আজিমের ধনভাণ্ডার। আমি তা তোমার ও আমার মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত করেছি।’ (ফাজায়েলুল কুরআন-১১৮)

কোনো পর্দা নেই : আলি ইবনে আবি তালেব রা: বলেন, নবীজী বলেছেন, ‘সূরায়ে ফাতেহা, আয়াতুল কুরসি, শাহিদাল্লাহু আন্নাহু লা ইলাহা ইল্লাহু এবং কুলিল্লাহুম্মা মালিকাল-মুলক- এসব আয়াত আরশে আজিমে ঝুলন্ত আছে। এগুলোর মধ্যে এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা নেই।’ (আল বয়ান ফি আদ্দি-আয়াল কুরআন-২৮)

একান্তভাবে আহ্বানের সূরা : ইবনে রজব হাম্বলি রহ: বলেন, সূরা ফাতেহা আল্লাহ তায়ালাকে একান্তভাবে আহ্বান করার সূরা। সে জন্য নামাজকে এই সূরার সাথে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা নামাজি ব্যক্তি তার রবকে একান্তভাবে ডাকেন। আর বান্দা স্বীয় রবকে সর্বোত্তম কালাম দিয়েই আহ্বান করে থাকেন। আর তা বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত।(তাফসিরু সূরাতিল ফাতিহা লি-ইবনে রজব-৪০)

কুরআনের ভাবার্থকে সমন্বয়কারী : হজরত ইবনে আবি হাতেম রা: উল্লেখ করেন, আল্লাহ তায়ালা ৪০৪টি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এসব কিতাবের ভাবার্থকে তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআনসহ চার কিতাবে একত্রিত করেছেন। আবার এই চারটি কিতাবের সারমর্মকে কুরআনে একত্রিত করেছেন। আর কুরআনের স¤পূর্ণ ভাবার্থকে সূরা ফাতেহায় একত্রিত করেছেন। আবার সূরা ফাতেহার ইলম-জ্ঞানকে ইয়্যাকা-না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন আয়াতে সন্নিহিত করে দিয়েছেন। (তাফসিরু সূরাতিল ফাতিহা লি-ইবনে রজব-৪১)

চার কিতাব পাঠের সমতুল্য : সূরা ফাতেহার গুরুত্ব ও ফজিলত এতটাই বেশি যে, এই সূরার পাঠকে আসমানি বড় চারগ্রন্থ পাঠের সমতুল্য বলা হয়েছে। সাহাবি আবু উবায়দা রা: বলেন, নবীজী বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করল, সে যেন সে তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন পাঠ করল।’ (ফাজায়েলুল কুরআন-১১৭)

সর্বরোগের মহৌষধ : সূরা ফাতেহার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এটি সর্বরোগের মহৌষধ। এটি অন্তরের রোগের চিকিৎসায় যেমন কার্যকরী তেমনি শারীরিক রোগ থেকেও পরিত্রান দানকারী। নবীজী সা: বলেছেন, ‘ফাতেহাতুল কিতাব মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের মহৌষধ’ যেমনটি কুরআনে এসেছে- ‘হে লোকসকল! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে উপদেশ ও অন্তরসমূহে যা আছে তার আরোগ্য এবং মোমেনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।’ (সূরা ইউনুস-৫৭)

মানুষ ও জিন শয়তান থেকে রক্ষাকারী : সূরা ফাতেহার আমল মানুষকে জাদুটোনা থেকে মুক্তি দেয়। মানুষ ও জিন শয়তান থেকে হেফাজত করে। নবীজী সা: বলেছেন, ‘বান্দা যদি তার স্ত্রীকে স্বীয় বিছানায় রেখে বিসমিল্লাহ এবং সূরা ফাতেহা পাঠ করে, তাহলে জিন শয়তান ও মানুষ শয়তানের খারাবিসহ অন্যান্য সব অনিষ্টকারী বিষয় থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে।’ (আল মুজামুল আওসাত-৪৫৯৪)

পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেয়া হয়নি : দুনিয়ার শুরু থেকে মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত যত নবী এসেছেন, তাদের কাউকে এমন মর্যাদাপূর্ণ সূরা দেয়া হয়নি। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, এক দিন জিবরাইল আ: নবীজীর পাশে বসা ছিলেন। এ অবস্থায় ওপরের দিকে একটি আওয়াজ শুনে তিনি মাথা ওপরের দিকে উত্তোলন করলেন। অতঃপর বললেন, আসমানের এই দরজাটি আজকে খোলা হয়েছে যা ইতোপূর্বে কখনো খোলা হয়নি। সেখান দিয়ে কিছু ফেরেশতা অবতরণ করলে তিনি বললেন, এই ফেরেশতারা আজকেই প্রথম দুনিয়াতে অবতরণ করেছেন। ইতোপূর্বে তারা কখনোই দুনিয়াতে আসেননি। (হে নবী) আপনি দুটো নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা কেবল আপনাকে দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে কোনো নবী-রাসূলকে তা দেয়া হয়নি। তা হচ্ছে, সূরা ফাতেহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ। (মুসলিম-২৫৪)

লেখক :

  • শাহাদাত হোসাইন

খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ, রংপুর

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877